ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যে মুসলিমবিরোধী উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে ফের উদ্বেগ ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি গোলপাড়া জেলার পাইকান সংরক্ষিত বনভূমিতে এক উচ্ছেদ অভিযানে পুলিশের গুলিতে এক মুসলিম ব্যক্তি নিহত হন এবং আরও একজন আহত হন।
এই ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মুসলিমবিরোধী অবস্থান এবং “অবৈধ অনুপ্রবেশকারী” তত্ত্ব ফের প্রশ্নের মুখে।
সরকারি বিবরণ অনুযায়ী, বন বিভাগের জমি পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে ১৪০ হেক্টর এলাকা খালি করা হয়। বাস্তবে এর শিকার হয়েছেন প্রায় ১,০৮০টি পরিবার—এদের অধিকাংশই বহু বছর ধরে বসবাসরত বাঙালি মুসলিম। স্থানীয়রা বলছেন, তারা সরকারকে কর দেন, ভোট দেন, কিন্তু এখন অনুপ্রবেশকারীর তকমায় তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এক্স (সাবেক টুইটার)-এ স্পষ্টভাবে লিখেছেন, “উচ্ছেদ চলতেই থাকবে। বনভূমি দখলমুক্ত করাই আমাদের লক্ষ্য।” এর আগেও তিনি বহুবার বলেন, আসামে বসবাসরত বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের অনেকে ‘বাংলাদেশি’ এবং এদের সরানো হবে।
২০২৩ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার মন্তব্যের জবাবে শর্মা বলেন, “ভারতে অনেক হুসেইন ওবামা আছে, আসাম পুলিশ তাদের দেখবে”—এই মন্তব্যটিকে বিরোধীরা ‘ঘৃণার রাজনীতি’র উদাহরণ বলে আখ্যা দেন।
গত এক মাসেই অন্তত পাঁচটি বড় উচ্ছেদ অভিযানে আসামের চার জেলায় ৩,৫০০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। জুনে গোলপাড়ার হাসিলাবিল এলাকাতেও প্রায় ৬৯০টি ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রতিটি অভিযানেই লক্ষ্য হন বাঙালি মুসলিমরা।
এই প্রবণতাকে বিশ্লেষকরা বলছেন “বুলডোজার জাস্টিস”—যেখানে সরকারি ব্যাখ্যার আড়ালে একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করা হচ্ছে।
উচ্ছেদপ্রাপ্তরা ইতোমধ্যেই প্রতিবাদে নেমেছেন। কংগ্রেস, তৃণমূলসহ বিভিন্ন বিরোধী দল বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই উচ্ছেদ নীতি শুধু সামাজিক অস্থিরতিই নয়, আসামে বড় ধরনের সংঘাতের জন্ম দিতে পারে।